Home Blog

কলার ফুল বা মোচা কী অ্যানিমিয়া সারাতে পারে?

সারমর্ম

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে কলার মোচা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সারাতে পারে। আমরা এই দাবীর সত্যতা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা জেনেছি যে এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক

Fact Check Rating

দাবি

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সারানো নিয়ে অনেক ঘরোয়া পধ্যতি রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল কলার ফুল বা মোচা অ্যানিমিয়া সারাতে পারে । পোস্টটি এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে ।

সত্যানুন্ধান

মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কী কলার মোচা উপকারী?

হ্যাঁ। কলার মোচা কে অনেক সময় কলার হৃদয় বলা হয়। এটার ফ্লেবার হয়ত কড়কড়ে, বাদামের মত বা স্টার্চের মত। কিন্তু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে খাওয়ার যোগ্য এই ফুলগুলি বিশেষভাবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন এ, ই ও সি রয়েছে, সেই সঙ্গে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলির জন্য এটি দিয়ে ব্রংকাইটিস, আলসার এবং কনস্টিপেসন সারানো যেতে পারে। এছাড়াও, ব্লাড সুগারের মাত্রা কমানো ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও এটি সাহায্য করতে পারে। এটি পিরিয়ড বা মাসিকের ফ্লো কমানো, মাসল ক্র্যাম্প, হাড় মজবুত রাখা এবং এমনকি যে মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য দুধের পরিমাণ বাড়াতেও এটি কাজ করে। এটিও উল্লেখ করা উচিত যে মোচা সাশ্রয়ী একটি কৃষি উপজাত বা বাই প্রোডাক্ট। এবং বিভিন্ন ধরণের নতুন রান্নার জন্য উপযোগী ও সেই সঙ্গে ডিহাইড্রেটেড পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধে কী কলার মোচা সাহায্য করতে পারে?

হ্যাঁ। এটি একটি কার্যকরী খাবার যা ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিগত ভাবে উপকার করে। কলার মোচায় ম্যাক্রো ও মাইক্রো দুটি উপাদানই খুব বেশি মাত্রায় থাকে। খাওয়ার উপযোগী এই অংশটি আয়রনের খুব ভালো উৎস। এছাড়া, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে কলার মোচার তৈরী রান্না থেকে কোন ব্যক্তি তার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় আয়রনের পরিমাণ পুষিয়ে নিতে পারেন। এভাবেই কলার মোচা থেকে আয়রনের সঞ্চয় বাড়তে পারে। অ্যানিমিয়ার উপসর্গ কমানোর জন্য এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানত ক্লান্তি, অবসাদ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া প্রভৃতি। এভাবেই, নিয়মিত ও সুষম মাত্রায় কলার মোচা খেলে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ে। যার ফলস্বরুপ যারা আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে।

কলার মোচা কী অ্যানিমিয়া পুরোপুরি সারাতে পারে?

ঠিক তা নয়। অ্যানিমিয়া রক্তের একটি অবস্থা। আয়রনের ঘাটতি, ক্ষতিকর বা পেরিনিয়াস, অ্যাপ্লাস্টিক এবং হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া হল এর বিভিন্ন ধরন। এছাড়া, এগুলির মধ্যে কিছু কম ক্ষতিকর আবার কিছু খুব জটিল, এমনকি তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই বিশেষ ধরণের অ্যানিমিয়া বিভিন্ন ঝুঁকির কারণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই, অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে উপসর্গগুলি কমানো, সেই সঙ্গে অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি সমাধানের পাশাপাশি অ্যানিমিয়ার জটিলতাগুলি কমানো ও স্বাস্থ্যের উন্নতিও জড়িত। তাছাড়া, মাইল্ড বা অল্প মাত্রায় অ্যানিমিয়া ডায়েটের পরিবর্তন করে বা সাপ্লিমেন্টের সাহায্যে কমানো যেতে পারে। কিন্তু বেশি মাত্রায় অ্যানিমিয়া সারাতে ওষুধ বা ব্লাড ট্রান্সফিউশান বা রক্ত দিতে হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এর কারণ খুঁজে বের করে এর চিকিৎসা করতে হতে পারে।

তাই, কলার মোচা অল্প অ্যানিমিয়ার উপসর্গ যা আয়রনের ঘাটতির জন্য হয় তা সারাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, এমন কোন প্রমাণ নেই যে কলার মোচা এককভাবে গুরুতর বা প্রাণঘাতী অ্যানিমিয়ার সমস্যার সমাধান করতে পারে।

অ্যানিমিয়া সারাতে শুধুমাত্র পুষ্টির ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ কেন?

অ্যানিমিয়া হয় প্রধানত তিনটি অবস্থার কারণে। এর মধ্যে রয়েছে লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসি তৈরী হতে না পারা, খুব বেশি মাত্রায় আরবিসি-র ক্ষতি হওয়া এবং রক্তক্ষরণ। বিশ্বজুড়ে পুষ্টির ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়ার সমস্যা ক্রমাগত হয়ে চলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে এই সমস্যার জন্য অন্তর্নিহিত শারীরিক সমস্যা ও হয়ত বংশগত সমস্যাও। অ্যানিমিয়া সারানো শুধুমাত্র পুষ্টির ওপর ভিত্তি করে করা যায় না, চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার সঙ্গে ডায়েটের পরিবর্তন করাও জরুরি। এছাড়াও, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পুষ্টিগত সাপ্লিমেন্টগুলি অল্প উপসর্গে কাজ করতে পারে। তবে, রোগীর অবস্থায় যদি এই সাপ্লিমেন্ট গুলিতে কোন ফল না হয়, তবে একজন চিকিৎসকই পারবেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।

General Physician Dr Kahsyap Dakshini

আমরা জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিণীকে জিজ্ঞাসা করেছি যে অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় শুধুমাত্র পুষ্টির উপর নির্ভর করা কেন ঝুঁকিপূর্ণ এবং অ্যানিমিয়া সারানোর সঠিক উপায় কী। ডাঃ কাশ্যপ ব্যাখ্যা করে জানান, ”সামগ্রিকভাবে অ্যানিমিয়া সারাতে হলে এর কারণ জানা খুব জরুরি। অ্যানিমিয়া সাধারণত যে যে কারণে হয় তা হল – রক্তক্ষরণ, পুষ্টির অভাব, ভালো মানের লোহিত রক্তকণিকা তৈরি না হওয়া, ত্রুটিপূর্ণ লোহিত রক্তকণিকার ক্ষয়, কঠিন কিছু অসুখ, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা ক্রনিক ইনফেকশন, রেনাল বা অটোইমিউন রোগ এবং থ্যালাসেমিয়া। তাই অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রধান বিষয় হল এটা জানা কী কারণে অ্যানিমিয়া হয়েছে। পুষ্টির অভাবে হওয়া অ্যানিমিয়া সারাতে আয়রন, ভিটামিন বি১২ বা ফলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। যেসব রোগীর খুব বেশি পরিমাণে আয়রনের অভাব থাকে তাদেরকে কমে যাওয়া হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক করতে রক্ত দেওয়া বা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয়।“

খাবার হিসেবে কলা গাছের ফুল বা মোচার পুষ্টিগুণ নিয়ে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে কলার উপকারিতা নিয়ে অনেক অথ্য পাওয়া গেলেও কলার ফুল বা মোচার উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য খুবই অল্প। ফলে, এর বিস্তারিত সম্ভাব্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাই এই দাবীকে অর্ধেক ঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়।

এলাচ কী ডিপ্রেশন সারাতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে এলাচ খেলে ডিপ্রেশন সারে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন কে ঘরোয়া উপায়ে ঠিক করা নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্তিকর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট আছে। এর মধ্যে একটি হলো এলাচ খেলে ডিপ্রেশন ঠিক হয়ে যায়। পোস্টটি এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে ।

সত্যানুন্ধান

ডিপ্রেশন কী?

ডিপ্রেশন হল মানসিক স্বাস্থ্যের এমন একটি সমস্যা যেখানে সবসময় একটা দুঃখ বোধ থাকে, কাজে উৎসাহ হারিয়ে যায় এবং ঘুম ও খিদের ব্যাঘাত ঘটে। এতে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটে, কখনো কখনো নিজেকে আঘাত করা বা আত্মহত্যার ভাবনার মত চরম অবস্থার দিকে নিয়ে যায়।

ডিপ্রেশনের সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী?

ডিপ্রেশনের প্রধান সাধারণ লক্ষণগুলো হল ক্রমাগত মন খারাপ, উৎসাহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, ঘুম বা খিদের পরিবর্তন, ক্লান্তি, সবকিছুকে মূল্যহীন লাগা বা অপরাধবোধ, মনসংযোগে অসুবিধা এবং গুরুতর কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা করা। ডিপ্রেশনের জটিলতা তৈরি হয় জেনেটিক, শারীরবৃত্তিয় বা বায়োলজিকাল, পরিবেশগত ও বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ইত্যাদি বিভিন্ন কারণের মিশ্রণের ফলে। ডিপ্রেশন বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকমের হয় এটা মনে রাখা জরুরি এবং এর প্রকাশ জেনেটিক, বায়োলজিকাল, পরিবেশ ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে।

ডিপ্রেশনের চিকিৎসা কী?

ডিপ্রেশনের চিকিৎসা ব্যক্তিবিশেষে আলাদা আলাদা হয়। যদিও ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলির সম্ভাবনাকে স্থায়ীভাবে দুর করে একে নির্দিষ্ট করে সারানো যায় না, তবে অনেকেই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ ও দূরে সরিয়ে দিতে পারেন। ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সাধারণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছেঃ সাইকোথেরাপি (কাউন্সিলিং) – বিভিন্ন রকমের সাইকোথেরাপি যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি), ডায়েলেক্টিকাল বিহেভিয়ারাল থেরাপি (ডিবিটি), এবং ইন্টার পারসোনাল থেরাপি (আইপিটি) – ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় কার্যকরী। এই থেরাপিগুলি মানুষের চিন্তার ধরণ, আচরণ এবং আবেগকে বুঝতে এবং তাদের ডিপ্রেশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে লাগে।

Dr Manisha Gaur

আমরা এর আগে খুব বেশি মাত্রায় উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি মোকাবিলার ক্ষেত্রে থেরাপির ভূমিকা এবং বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছি। এছাড়াও, আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং কাউন্সেলর ডঃ মনীষা গৌড়ের সাথে একটি গভীর আলোচনা চালিয়েছি যেখানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উদ্বেগজনিত সমস্যা বা অ্যাংজাইটি ডিসর্ডার ও তার চ্যালেঞ্জগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়।

  • ওষুধপত্রঃ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ব্রেণের নিউরোট্র্যান্সমিটার নিয়ন্ত্রণ ও ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলিকে দূর করার জন্য অ্যান্টিডিপ্রেশন ওষুধ খাওয়ার কথা বলতে পারেন।
  • লাইফস্টাইলের পরিবর্তনঃ স্বাস্থ্যকরার জীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল মেনে চলে মনের ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া।
  • সাহায্যকারী সম্পর্কঃ সামাজিক ক্ষেত্রে মজবুত যোগাযোগ গড়ে তোলা এবং বজায় রাখার মাধ্যমে আবেগজনিত সাহায্য এবং বোঝাপড়া তৈরী করতে পারে, যা ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
  • মন-শরীরের কাজকর্মঃ মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন বা মনসংযোগকারি ধ্যান এবং যোগব্যায়ামের মতো শরীরচর্চা চাপ কমানো এবং মানসিক সুস্থতার বাড়ানোর মাধ্যমে ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলি কম করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।

এটা মনে রাখা জরুরি যে এই সমস্ত কিছুর কার্যকারিতা ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। একধরণের চিকিৎসায় কিছু মানুষের সমস্যায় খুব ভালো সাড়া পাওয়া যায়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে কয়েকটি থেরাপির একসঙ্গে সাহায্য নিলে ভালো ফল মেলে। এছাড়াও, ডিপ্রেশনের অবস্থা কতটা গভীর তার ওপর ভিত্তি করেও চিকিৎসা বেছে নেওয়া হয়।

এলাচ কী ডিপ্রেশন সারাতে পারে?

ঠিক তা নয়। এলাচের মধ্যে মন শান্ত করার ও মন ভালো করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে খুব অল্প কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু শুধুমাত্র এলাচ ব্যবহার করে ডিপ্রেশন সারানো যায় এমন ধারণা করা ঠিক নয় এবং করা উচিত নয়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে সেরোটোনিনের মত নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর কাজ করতে পারে এমন সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য এলাচের মধ্যে কিছু অ্যান্টি ড্রিপেশন্ট বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে এই গবেষণা প্রাথমিক ভাবে প্রানীদের ওপর করা হয়েছে এবং এটা নিয়ে আরো অনেক বড় আকারের গবেষণা প্রয়োজন। এলাচের স্নিগ্ধ গন্ধে মন শান্ত হয় ও মানসিক চাপ কমে বলে শোনা যায়, যা পরোক্ষভাবে মন ভালো করে। ডিপ্রেশন মানসিক স্বাস্থ্যের একটি জটিল অবস্থা যার পেছনে ।

অনেকগুলি কারণ থাকে। এর চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র একটি খাদ্য বস্তু নয়, এর জন্য একটি সামগ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়া প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে থেরাপি, ওষুধ এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তন।

এছাড়াও, নিজে থেকে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করা বিপজ্জনক হতে পারে। একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত পেশাদারের কাছ থেকে পেশাদার সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যিনি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে এবং সুপারিশ করতে পারবেন।

Rahul Bansal, Psychiatrist

কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ রাহুল বনসাল, THIP-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, “চিকিৎসায় কোন রকম দেরি হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে।

Dr Binda Singh

এলাচ দিয়েই শুধুমাত্র ডিপ্রেশন সারানো যায় এটি একটি জটিল অবস্থতার অতি সরলীকরণ এবং ডিপ্রেশনের মত অবস্থার চিকিৎসায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও সামগ্রিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ বিন্দা সিং বলেছেন, “ডিপ্রেশন একটি রোগ এবং এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন পরিবেশের কারণে, ট্রমার কারণে বা কিছু শারীরিক সমস্যাসহ নানা কারণ থাকতে পারে। ডিপ্রেশন মোকাবিলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, তার মধ্যে ওষুধ, কাউন্সিলিং, ইতিবাচক চিন্তা, যোগাযোগ বাড়ানো ইত্যাদি রয়েছে। দূর্ভাগ্যবশত, খাবারের মাধ্যমে ডিপ্রেশন সারানোর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।“

Dr Sameer Kalani

অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ সমীর কালানি THIP মিডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে শুধুমাত্র ঘরোয়া উপায়ে ডিপ্রেশনের মূল কারণ দূর করা যায় না।

মেথি, আদা এবং মধু কী অ্যাস্থমা বা হাঁপানি সারাতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সুপারিশ করে যে মেথি, আদা এবং মধু পান করলে হাঁপানি নিরাময় হয়। আমরা সত্য-পরীক্ষা করেছি এবং দাবিটি বেশিরভাগই মিথ্যা বলে পেয়েছি ।

Rating

দাবি

হাঁপানি নিরাময় নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক পোস্ট রয়েছে। বিভিন্ন পোস্টের মধ্যে একটি হল মেথি, আদা এবং মধু পান করলে হাঁপানি নিরাময় হয়। আপনি এখানে সেরকম একটি পোস্ট দেখতে পারেন ।

সত্যানুন্ধান

অ্যাস্থমা বা হাঁপানি কী?

হাঁপানি শ্বাসনালীর সঙ্গে জড়িত একটি সমস্যা, অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা মিউকাসের জন্য শ্বাসনালী সরু হয়ে যায় ও ফুলে যায়। এই সরু হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়ার ফলে শ্বাস নেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে, কখনো এর সাথে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়। এছাড়াও যাদের হাঁপানি আছে তারা প্রায়শই কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন।

হাঁপানি কী সম্পূর্ণ সেরে যায়?

ঠিক তা নয়। হাঁপানি দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক সমস্যা বলে মনে করা হয়, এর অর্থ হল এই অবস্থা সম্পূর্ণ সেরে যায় না। তবে, সঠিক উপায়ে ওষুধ ও লাইফস্টাইলের পরিবর্তন করলে অনেক মানুষই তাদের হাঁপানির লক্ষণ গুলি কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বা সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন। যাদের হাঁপানি আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শে তাদের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরিকল্পনার সাহায্যে তাদের লক্ষণগুলি কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। হাঁপানির সম্ভাব্য নিরাময় বা আরো ভালোভাবে কীভাবে এর চিকিৎসা করা যায় তার জন্য গবেষণা চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত সেরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

আমরা এনএমসি হেলথ কেয়ারের পালমোনোলজিস্ট ডাঃ মুহাম্মদ আনাসকে হাঁপানি পুরোপুরি সারানো যায় কিনা তা জিজ্ঞাসা করেছি। এতে উনি বলেন, “হাঁপানি পুরোপুরি সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এটা সারাজীবনের একটি রোগ, ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চললে একমাত্র একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তখন ওষুধ বন্ধ করে লাইফস্টাইলের পরিবর্তনগুলি মেনে চললেই হল। কিন্তু জীবনের যে কোন সময়ে কেউ যদি তার ট্রিগার বা উদ্দীপকের সংস্পর্শে আসেন তবে হাঁপানির সমস্যা আবার শুরু হতে পারে, তখন আবার ওষুধের প্রয়োজন হয়। এই ট্রিগারগুলি জলবায়ু পরিবর্তন বা দূষণ অথবা অন্য কোন অ্যালার্জেন হতে পারে।“

আমরা ডাঃ আনাসকে আরও জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ডায়েট হাঁপানি সারাতে পারে কিনা। এতে তিনি বলেন, “ডায়েট হাঁপানি সারাতে পারে এটা সম্ভব নয়। যেহেতু কিছু খাবারের প্রতি মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে, তাই আপনার খাবারের ট্রিগারগুলি জেনে রাখা এবং সেগুলিকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া ভাল। এটা বিশ্বাস না করাই ভালো যে ডায়েট হাঁপানি সারাতে পারে, এতে চিকিৎসায় দেরি হয়ে যেতে পারে। ভারতে, বিশ্বব্যাপী জিআইএনএ নির্দেশিকা অনুযায়ী হাঁপানির চিকিৎসা করা হয়।“ কোন একটি কারণের জন্য হাঁপানিতে শ্বাসনালী সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এমনটা নয়। এর জন্য, হাঁপানি সারাতে কোন একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা ঠিক করা কঠিন। যেসব চিকিৎসা রয়েছে সেখানে কেবলমাত্র উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যায় যাতে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর

খেজুর আর মেথি কী পিঠের ব্যথা সারাতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে খেজুর আর মেথি খেলে পিঠের ব্যথা সেরে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

আজকাল কোমর/পিঠের ব্যথা প্রতিটি বয়সের একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু পিঠের ব্যথা সারাতে ইন্টারনেটের চারপাশে অনেক মিথ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল খেজুর এবং মেথি পিঠের ব্যথা সারাতে পারে।

সত্যানুন্ধান

পিঠের ব্যথা কেন হয়?

বিভিন্ন কারণের জন্য পিঠের ব্যথা হতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে মাসল স্ট্রেন বা পেশীতে টান ধরা, লিগামেন্ট মচকে যাওয়া, হার্নিয়েটেড ডিস্ক, আর্থারাইটিস বা অস্টিওপরোসিসের মতো অবস্থা, মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা, এমনকি মানসিক চাপ এবং শরীরের ভঙ্গির অস্বাভাবিকতা। পিঠে ব্যথার তীব্রতা এবং কারণ বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

ডায়েটের মাধ্যমে কী পিঠের ব্যথা সারে?

ঠিক তা নয়। যদিও ডায়েট খুব ভালোভাবে পিঠের ব্যথা দূর করতে পারেনা তবে একে নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর বিষয়ে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় প্রায়শই ইনফ্ল্যামেশন জড়িত থাকে তাই ডায়েটের কিছুটা পরিবর্তন করলে তা নিয়ন্ত্রণ বা কমাতে সাহায্য করে। তাই, পিঠের ব্যথার পেছনে কী কারণ রয়েছে তা নির্ধারণ করতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত একজন পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়াও, এটাও জেনে রাখা জরুরি যে শুধুমাত্র ডায়েট পিঠের ব্যথার মত জটিল অবস্থার মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, এর মধ্যে রয়েছে ডায়েটের পরিবর্তন, সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন ব্যায়াম, ফিজিকাল থেরাপি এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ পিঠের ব্যথা কমানোয় কার্যকরী হয়। এও জেনে রাখা দরকার যে পিঠের ব্যথার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ওয়ান-সাইজ-ফিট-অল-অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ সবকিছুর-জন্য-একটাই-সমাধান নেই, তাই অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন খাবারগুলিকে সনাক্ত করা এবং বাদ দেওয়া কারো কারো ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।

এটা কী ঠিক যে খেজুর আর মেথি খেলে পিঠের ব্যথা সারে?

ঠিক তা নয়। যদিও ফেনুগ্রীক(মেথি) ও খেজুরের মত প্রাকৃতিক প্রতিকারের জিনিসগুলি থেকে শারীরিক ক্ষেত্রে অনেক উপকার হয় তবুও পিঠের ব্যথায় এর কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কমই আছে। মেথি বীজে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যাদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে বলে যদিও মেথি (ট্রাইগোনেলা ফোনাম গ্রেকাম)- এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সম্ভাব্য উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং জানা গেছে, এটি শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সনাতনী পদ্ধতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার রয়েছে, এর মধ্যে ব্যথা কমানোও রয়েছে। তবে, এটি পিঠের ব্যথা সারাতে পারে কিনা সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কিছু গবেষণায় উপকার হতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে, তবে এটা কীভাবে কাজ করে আর এর কার্যকারিতা কতটা তা নিয়ে আরো অনেক বেশি গবেষণার প্রয়োজন।

মেথিতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যেগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কিছু ক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেশন এবং পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, বিশেষত পিঠের ব্যথা নিয়ে গবেষণা সীমিত। এছাড়াও মেথি মাসলের ব্যথায় সাহায্য করতে পারে যা কিছুক্ষেত্রে পিঠের ব্যথা, যা পেশীর টানের জন্য হয় তা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, মেথি ব্যথায় কাজ করে এরকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সংখ্যা কম এবং এর পদ্ধতি কী তা নিয়ে অনেক বড় মাপের কোন গবেষণা নেই। এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে গেলে আমাদের আরও ভালোভাবে ডিজাইন করা ক্লিনিকাল ট্রায়াল দরকার। তাই পিঠের ব্যথা সারাতে শুধু মেথির ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়।

খেজুর বিভিন্ন রকম পুষ্টির উপাদান যেমন ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং নানা ভিটামিনের খুব ভালো উৎস যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যদিও খেজুর কার্বোহাইড্রেট ও কিছু পুষ্টিগুণের খুব ভালো উৎস তা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন যা শরীরকে সামগ্রিকভাবে ভালো রাখার জন্য জরুরি তার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও, খেজুরে যেহেতু শর্করা বা সুগারের মাত্রা যথেষ্ট বেশি তাই বেশি মাত্রায় খেজুর খেলে শরীরে ব্লাড সুগারের পরিমাণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে ডায়েটে যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের পরিমাণ যথেষ্ট না থাকে তবে শরীরের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া, বিশেষ কয়েকটি খাদ্যবস্তুর ওপর পছন্দ সীমিত করে ফেললে তা থেকে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে এবং তা থেকে মেটাবলিক ফাংশান বা বিপাক ক্রিয়া ব্যহত হয় এবং তা থেকে সামগ্রিক স্বাস্থ্যে এর ছাপ পড়ে।

Rachit Gulati (Orthopaedician)

সাওল অর্থো কেয়ারের অর্থোপেডিশিয়ান এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ রচিত গুলাটি বলেছেন, “পিঠের ব্যথার চিকিৎসায় ডায়েট একটি সহায়ক হিসাবে কাজ করতে পারে। এর মানে হল, ভালো খাবার দাবার চিকিৎসার ফলকে উন্নত করতে পারে তেমনি খারাপ খাবার দাবার এর ফলকে নিম্নমুখী করে তুলতে পারে। কিন্তু পিঠের ব্যথার উপশমে সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি হল তা হল ওষুধ, সবচেয়ে কম পরিমাণে চাপ দেওয়া, ফিজিওথেরাপি, সঠিক দেহের ভঙ্গি, ওজন কমানো এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন।”

পিঠের ব্যথা মোকাবিলায় সঠিক পন্থা কী?

পিঠের ব্যথা মোকাবিলায় দরকার সামগ্রিক পন্থা বেছে নেওয়া যার মধ্যে রয়েছেঃ

  • সঠিক কারণ নির্ধারণঃ পিঠের ব্যথার পেছনে কারণটি কী তা খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন পেশাদার বা ডাক্তারের প্রয়োজন। এতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে, চিকিৎসা বা রোগীর ইতিহাস জানা এবং কিছু ক্ষেত্রে এক্স-রে বা এমআরআই এর মত কিছু পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে।
  • চিকিৎসার পরিকল্পনাঃ পিঠের ব্যথার চিকিৎসা হয় ব্যথার কারণ বা তা কতটা বেশি তার ওপর নির্ভর করে। এই চিকিৎসার মধ্যে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি একইসঙ্গে চালানো হয় যেমন, ফিজিকাল থেরাপি, ওষুধ, ঠান্ডা/গরম সেঁক, ব্যায়াম, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং কখনো কখনো খুব বেশি ব্যথায় অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বা লাইফস্টাইলঃ পিঠকে ঠিকঠাক রাখতে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চলা দরকার। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, দেহের ভঙ্গিমা সঠিক রাখা এবং অনেকক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চললে পিঠের ব্যথার সম্ভাবনা কমে।
  • প্রাকৃতিক প্রতিকারের ব্যবস্থাঃ কেউ কেউ হালকা পিঠের ব্যথা দূর করতে প্রাকৃতিক উপায়গুলি যেমন গরম বা ঠান্ডা সেঁক, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম বা কিছু ডায়েটের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কারোর কারোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলি কিছুটা আরাম দিতে পারে, কিন্তু খুব বেশি মাত্রায় বা ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথার পেছনে আসল কারণটি কী তা বের করতে পারে না।

তুলসী মধু খেয়ে কি একদিনে ঘরে বসে জ্বর সারিয়ে ফেলা যায়?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে তুলসী পাতা, গোলমরিচ ও মিছরির মিশ্রণ খেলে একদিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

ইন্টারনেটে জ্বর নিরাময়ের অনেক ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে। অনেক ওয়েবসাইট, এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিভিন্ন কার্যকর প্রতিকার সম্পর্কে দাবি করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি হল তুলসী। বলা হয়ে থাকে যে তুলসী জ্বর ও কাশি সারাতে কার্যকরী।

সত্যানুন্ধান

হোলি বেসিল (তুলসী), গোলমরিচ এবং মিছরি কী একদিনের মধ্যে জ্বর সারিয়ে দিতে পারে?

হোলি বেসিল (তুলসী), গোলমরিচ এবং মিছরি (রক সুগার) একদিনের মধ্যে জ্বর সারিয়ে দিতে পারে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শরীরের জন্য এই জিনিসগুলির কিছু উপকারিতা থাকলেও এবং এগুলো সনাতনী চিকিৎসায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও বলা যায়, জ্বর সারানো জ্বরের অন্তর্নিহিত কারণের ওপর নির্ভর করে।

সাধারণত, জ্বর ওষুধ ছাড়াই কমে যেতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য সবসময় ওষুধের প্রয়োজন নেই। এটা শরীরের ভেতরের কোন অসুখের লক্ষণ বা সংক্রমণ বা অন্য কোন অবস্থার লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় এবং এর সময়কাল ও কতটা কম-বেশী হবে তা নির্ভর করে ঐ কারণের উপর। জ্বর নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল এর অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা ও এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। এর মধ্যে বেশি করে জল খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারের পরামর্শ অনুযায়ী এসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার জ্বর-কমানোর ওষুধ খেলে উপকার হতে পারে।

তুলসী, গোলমরিচ এবং মিছরি সনাতন চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, এর কারণ হল এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যেমেটরি ও রোগ প্রতিরোধকারী কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে এগুলি শরীরের জন্য উপকারী। তবে, বিশেষ একটি অবস্থা যেমন জ্বরের মত শারীরিক অবস্থায় এরকম মিশ্রণের কার্যকারিতা কতটা তার পেছনে যথেষ্ট পরিমাণে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এবং প্রয়োজনে এগুলি চিকিৎসার বিকল্প বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। যদি আপনি বা আপনার কোন পরিচিত মানুষের জ্বর হয়, তবে সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত কোন পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তারা জ্বরের অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে পারবেন ও এর জন্য ওষুধ, বিশ্রাম বা অন্য কী করা উচিৎ তা নিয়ে পরামর্শ দিতে পারবেন।  

জ্বর হলে কোন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজনীয় কেন?

হালকা সংক্রমণ থেকে শুরু করে গুরুতর শারীরিক অবস্থা পর্যন্ত বিস্তৃত রোগের লক্ষণ হতে পারে জ্বর। কিছু ক্ষেত্রে, জ্বর একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে, যেমন মেনিনজাইটিস বা সেপসিস। এই অবস্থার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন, তাই আপনার যদি জ্বর থাকে এবং তার সাথে অন্যান্য কিছু লক্ষণ, যেমন ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, গায়ে ফুসকুড়ি বেরোন বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া এরকম কিছু হয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

General Physician

জেনারেল ফিজিশিয়ান ডঃ অতুল বশিষ্ঠ বলেছেন, “জ্বরের জটিল এবং বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি, বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গের সাথে তার যোগসূত্রের জন্য জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। একজন ডাক্তারের দক্ষতাই সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারে, যার ফলে, কার্যকর চিকিৎসা এবং রোগীর ক্ষেত্রে সেই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পূর্বাভাষ দেওয়া যায়।“ কি কারণে জ্বর হয়েছে তার উপর নির্ভর করে, জ্বরের চিকিৎসার বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। একজন ডাক্তার জ্বর কমানোর ওষুধ দিতে পারেন, সেই সঙ্গে কী কারণে জ্বর হয়েছে তা নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে পারেন। সবশেষে বলা যায়, কিছু ক্ষেত্রে, জ্বর ডিহাইড্রেশন বা খিঁচুনির মতো জটিলতা তৈরী করতে পারে। একজন ডাক্তার উপযুক্ত চিকিৎসা করে এবং রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এই জটিলতাগুলি রোধ করতে সাহায্য করতে পারেন।

বাড়িতে সাদা চুল কী পুরোপুরি স্থায়ীভাবে কালো করা যায়?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে বাড়িতে তৈরী আমলকী, হলুদ ও সরষের তেলের মিশ্রণ সাদা চুলে লাগালে পুরোপুরি স্থায়ীভাবে কালো করে তোলা যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সাদা চুল কালো করা নিয়ে অনেক রকম ঘরোয়া পধ্যতি ছড়িয়ে আছে ইন্টারনেটে। তেমনি একটি পোষ্টে বলা হয়েছে সাদা চুল ঘরেই চিরতরে রাঙিয়ে দেয় গুজবেরি, হলুদ এবং সরিষার তেল দিয়ে তৈরি তেল। তেমনি একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে।

সত্যানুন্ধান

আমাদের চুল সাদা হয়ে যায় কেন?

বয়স বেড়ে চলার সাথে সাথে চুলের রঙ সাদা হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। হার্ভার্ড হেলথের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চুলের ফলিকলগুলি থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রঙ তৈরী হওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে, তাই যখন চুলের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়া ও এর আবার নতুন করে গজিয়ে ওঠার চক্রটি চলতে থাকে, ৩৫ বছরের পর চুলের গোড়া থেকে সাদা চুল গজিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরী হয়। এই প্রক্রিয়ায় জেনেটিক্সের একটি বড় ভূমিকা আছে। এছাড়াও, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা বা কারণের জন্য চুল সময়ের আগে পেকে যেতে পারে, যাকে বলা হয় বয়সের আগে চুল পেকে যাওয়া। এই কারণগুলির মধ্যে ভিটামিনের ঘাটতি, থাইরয়েডের রোগ, ভিটিলিগো এবং অ্যালোপেশিয়া রয়েছে।

অনেকে মনে করেন স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণেও চুল পেকে যেতে পারে। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কমই আছে। গবেষণায় এমন দেখা গেছে যে মানসিকের চাপের কারণে ইঁদুরের লোমগুলি সাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনা মানুষের ক্ষেত্রেও একইভাবে ঘটবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।

চুল সাদা হয়ে যাওয়া কী পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?

না। পণ্য উৎপাদকদের অনেকরকম মার্কেটিং বা বিপণনের দাবী সত্ত্বেও বলা যায় চুলের সাদা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরি উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না। প্রসাধনী রঙের বাইরে, যখন একটি চুলের ফলিকল রঙ তৈরী করে সেই রঙ হয় স্থায়ী ও তা কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। হার্ভার্ড ব্লগ জানিয়েছে যদি একটি মাত্র চুল বাদামী (বা লাল বা কালো বা সোনালী) হয়, এই রঙের পরিবর্তন কখনই সম্ভব নয় (যদি না আপনি চুলে রঙ করেন)।

Dermatologist & Cosmetologist

কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ও কসমেটোলজিষ্ট ডাঃ রীনা মাজিথিয়া আরো জানিয়েছেন, “চুল পেকে যাওয়া হচ্ছে প্রাথমিকাভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটিকে বিভিন্ন রকম জেনেটিক বৈশিষ্ট্য প্রভাবিত করে। যখন চুলের ফলিকলের পিগমেন্ট তৈরীর কোষগুলিতে রঙ তৈরীর পরিমাণ কমে যেতে থাকে তখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই কম পরিমাণে তৈরী হওয়ার জন্যই চুল দেখতে ধুসর বা সাদা হয়ে যায়।

চুল ভালো রাখতে লেবু ও নারকোল তেলের কিছু উপকারিতার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন এদুটি চুল নরম ও চকচকে করে, কিন্তু তারা কখনোই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলির পরিবর্তন করতে পারে না। লেবুর রস হল অম্ল জাতীয় বা অ্যাসিডিক এবং এটি হয়ত বাড়তি তেল বা স্কাল্পের ওপরে জমে থাকা কিছু সরিয়ে দিতে পারে,আবার নারকোল তেল চুলের পুষ্টিতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এদের কোনটিই মেলানিন (চুলের রঙ তৈরীতে যে পিগমেন্ট কাজে লাগে) তৈরীকে প্রভাবিত করতে পারে না বা বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে উল্টোমুখে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।“

Swati Watwani

পার্সসিয়ানলিলির স্কিন/হেয়ার/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি বলেছেন, “আপনি যখন ৪০-এর শেষের দিকে ও ৫০-এর গোড়ায় পৌঁছন তখন আপনার চুল সাদা হতে শুরু করে। কিন্তু সময়ের আগে পেকে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া ২০-র প্রথম দিকেও শুরু হয়ে যেতে পারে। তাই সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়ার পদ্ধতির গতি কমাতে এর পেছনে কারণগুলি খুঁজে বের করে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এটা পুরোপুরি উলটো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।“

আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে কী চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়?

আমলকী, সরষের তেল আর হলুদের মিশ্রণ দিয়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বয়স বেড়ে যাওয়া ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার পেছনে যে বিষয়টি রয়েছে তা হল চুলের রঙের জন্য যে পিগমেন্ট দায়ী মেলানিন, মেলানিনের পরিমাণ কমে যাওয়াই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ। কিছু প্রাকৃতিক উপায় ও উপাদান চুলকে ভালো রাখতে পারে ঠিকই, এর জন্য দায়ী কারণগুলির পরিবর্তন না করা গেলে কিন্তু সাদা চুল পুরোপুরি কালো করে দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে নিউট্রিশনের ঘাটতির কারণে সময়ের আগে চুল পেকে গেলে এই প্রক্রিয়ার গতিকে কিছুটা কমানো যায়।

আমলকী (যাকে আমলাও বলা হয়), সরষের তেল এবং হলুদ এধরণের অবস্থায় কাজে লাগতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করার মত যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

  • আমলকী (আমলা) – আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে যা চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার কারণে সময়ের আগে চুল পেকে যায়। কিন্তু আপনার ডায়েটের অংশ হিসেবে আমলকী খাওয়া বা আমলকী দিয়ে বানানো হেয়ার মাস্ক সাদা চুল পুরোপুরি বদলে দিতে পারে না কিন্তু এই মাস্ক চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
  • সরষের তেল – চুল ভালো রাখতে সরষের তেলের কিছু উপকারিতা রয়েছে, এতে স্কাল্প নরম থাকে ও চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়। সরষের তেল দিয়ে স্কাল্প মালিশ করলে চুল ভালো হতে পারে তবে, সাদা চুল উলটো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে না।
  • হলুদ – হলুদের মধ্যে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি স্কাল্প ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু সাদা চুলের রঙ পুরোপুরি আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে কিনা তার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

কিছু উপায় ও প্রসাধনী দিয়ে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে, তা দেখতেও ভালো হতে পারে কিন্তু তা দিয়ে সাদা চুল পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় না। আপনি যদি আপনার চুল সাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন এবং এটি আপনার আত্ম-সম্মানকে প্রভাবিত করে, আপনি পেশাদার পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য চুলের রং ব্যবহার বা ডার্মাটোলজিষ্ট বা ট্রাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলার কথা ভাবতে পারেন। মনে রাখবেন ঘরোয়া উপায়গুলি কতটা কাজ করবে তা কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হয় এবং আপনার যাতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য চুলের জন্য ঘরোয়া কোন উপায় ব্যবহার করার আগে সতর্ক হওয়া এবং একটি প্যাচ টেস্ট করা গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষ বিশ্বাস করে যে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় যেমন নাকে তেল দেওয়া চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, টমেটো এবং কফি ব্যবহার করলে সাদা চুল কালো হয়ে যেতে পারে, লেবু এবং পেঁয়াজ চুলের সাদা হয়ে যাওয়াকে পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে এবং আরও অনেক কিছু। যদি আপনি সাদা চুলের ব্যাপারে কিছু করতে চান তবে একজন ডার্মাটোলজিষ্ট বা পেশাদারী চিকিৎসা পরামর্শ নিন। তারা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন। মনে রাখবেন যে জেনেটিক্স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং লাইফস্টাইল সহ অনেকগুলি কারণ চুলের স্বাস্থ্য এবং চেহারাতে প্রতিফলিত হয়।

পেঁয়াজ এবং টুথপেস্ট ট্যানিং দূর করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে পেঁয়াজ ও টুথপেষ্ট দিয়ে ঘষলে ট্যান দূর হয়। এতে সোডা ও গোলাপ জল মেশানোর কথাও বলা হয়েছে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী ভুল

rating

দাবি

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে পেঁয়াজ এবং টুথপেস্ট ঘষে ত্বকের ট্যানিং দূর করার কথা বলা হয় । তেমনি একটি পোস্ট এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে।

সত্যানুন্ধান

মানুষের ত্বকের রঙ কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

মানুষের ত্বকের অনেক রকম টোন ও রঙ হয়। ত্বকের রঙের পেছনে অনেকগুলি কারণ থাকে, জেনেটিক্স হল প্রধান কারণ। টাইরোসিনেজ এনজাইম জিনগত প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী যা মানুষের ত্বকের রঙ নিয়ন্ত্রণ করে।

মেলানিন হল ত্বকের রঙের প্রধান নির্ধারক, মেলানোসাইট নামক কোষের মাধ্যমে আমাদের ত্বক যাকে তৈরি করে। মেলানিন সেই সমস্ত জিনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে যা পরিমাণগত ও গুণগত দিক থেকে আমাদের ত্বকের রঙ নির্ধারণ করে। এই জেনেটিক প্রক্রিয়া বা মেকানিজম ফ্যাকাল্টেটিভ মেলানোজেনেসিস এবং ট্যানিং প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিক হয়। এছাড়াও, ভিটামিন ডি, মেলানিনের মতো, বিভিন্ন টিস্যুতে কোষের বেড়ে চলা এবং পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এটিও ত্বকের রং প্রভাবিত করতে পারে।

ট্যানিং কী?

ট্যানিং হল এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি(ইউভি)র বিকিরণে ত্বকের রঙ গাঢ় হয়ে যায়। আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী বিকিরণের প্রাথমিক উৎস হল সূর্যের আলো, কিন্তু ট্যানিং বেডের মতো কৃত্রিম উৎস থেকেও এই রশ্মি বের হয়। যখন ত্বক ইউভি বিকিরণের সংস্পর্ষে আসে তখন শরীরের মেলানোসাইট (যে কোষ মেলানিন তৈরী করে) মেলানিন বেশি মাত্রায় তৈরী করে। ইউভি রশ্মির ক্ষতি যাতে আর না হতে পারে তার জন্য এই কোষগুলির এটি একটি রক্ষণাত্মক প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হয়। মেলানিন হল এমন একটি পিগমেন্ট যা থেকে মানুষের দেহের ত্বক, চুল ও চোখের রঙ তৈরী হয়। এটি ইউভি বিকিরণের শোষণ ও ছেড়ে দেওয়া বা বিচ্ছুরণের সময় প্রাকৃতিক সানস্ক্রীন হিসেবে কাজ করে। মেলানিন ত্বকের গভীর স্তরে প্রবেশের পরিমাণ কমায়। বাড়তি মেলানিন তৈরীর কারণে ত্বক কালো হয় বা ট্যানিং বাড়ে।

ট্যানিং কীভাবে দূর করা যায়?

কিছু পদ্ধতি আছে যা ট্যানিং দূর করতে সাহায্য করেঃ

১। এক্সফলিয়েশন বা ত্বকের ওপরের অংশ তুলে ফেলা – নিয়মিত ভাবে ত্বকের ওপরের অংশ তুলে ফেলার কাজ করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়, এর মাধ্যমে ট্যান হালকা হয়। স্ক্রাব, লুফা বা এক্সফলিয়েটিং গ্লাভস দিয়ে ত্বকের সবচেয়ে ওপরের অংশ তুলে ফেললে ট্যান হালকা হয়।

২। ত্বকের-রঙ হালকা করার পণ্য – বিভিন্ন ক্রিম, লোশন এবং সিরাম যাতে এমন উপাদান থাকে যা সময়ের সাথে সাথে ট্যানিংয়ের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই পণ্যগুলি ত্বকের প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েশন প্রক্রিয়ার গতিকে দ্রুত করতে এবং মেলানিন তৈরীকে বাধা দিতে সাহায্য করতে পারে।

৩। ব্লিচিং-এর জিনিসপত্র – কেউ কেউ ব্লিচিং-এর সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বককে হালকা করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এর জন্য বিশেষ সতর্কতা জরুরি এবং পেশাদারদের সাহায্য নিয়ে তা করা উচিত। সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে এগুলি থেকে ত্বকে জ্বালা এবং অন্যান্য সাইড এফেক্ট হতে পারে।

৪। কেমিক্যাল পিল – ডার্মাটোলজিষ্টরা অনেকসময় কেমিক্যাল পিলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এই পদ্ধতিতে একটি রাসায়নিক মিশ্রণ ত্বকে ব্যবহার করা হয় যাতে বাইরের স্তরটি এক্সফোলিয়েট হয় এবং এটি খোসা ছাড়ানোর মত করে উঠে আসে। এটি ট্যানিং এর পরিমাণ কমাতে ও নতুন এবং ফর্সা রঙ-এর ত্বক তৈরীতে কাজে লাগতে পারে।

লেসার চিকিৎসা – ট্যানিং এর জন্য যে হাইপারপিগমেন্টেশন হয় সেই জায়গাগুলিতে কয়েকরকমের লেসার চিকিৎসা বা ইনটেনস পালসড লাইট (আইপিএল) চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতিগুলিতে ত্বকের মেলানিন পিগমেন্টগুলি ভেঙে যায়, ফলে ট্যান হালকা হয়ে যায়।

পেঁয়াজ আর টুথপেষ্টের মিশ্রণ লাগালে কী ত্বকের ট্যান দূর করা যায়?

না।পেঁয়াজ আর টুথপেষ্টের মিশ্রণ লাগালে ত্বকের ট্যান দূর হয়, এরকম কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। দাঁতের যত্নের জন্যই টুথপেষ্ট তৈরী করা হয় এবং এটি কখনোই ত্বকে লাগানো উচিত নয়। টুথপেষ্টে এমন কিছু উপাদান থাকতে পারে যা থেকে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা বা অ্যালার্জি হতে পারে। অন্যদিকে পেঁয়াজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেটা থেকে হয়তো ত্বকের ক্ষেত্রে কিছু উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পেঁয়াজ ব্যবহার করে ত্বক সাদা করা যায় কিনা তা এখনো জানা যায়নি।

সাধারণভাবে, ট্যান দূর হলে ত্বক ঝকঝকে হতে পারে কিন্তু ট্যানিং দূর করা এবং ত্বক সাদা করার পেছনের উদ্দেশ্য আলাদা হতে পারে। এক্সফোলিয়েশনের মতো পদ্ধতি, ত্বক-সাদা করার উপাদানের ব্যবহার, বা কেমিক্যাল পিল বা লেজার থেরাপির মতো কিছু চিকিৎসায় ত্বক বা স্কিন টোন হালকা হতে পারে। পিগমেনটেশন কমানো ও ত্বকের রঙ হালকা করতে এই পদ্ধতিগুলির ব্যবহারে ওভারল্যাপিং এফেক্ট থাকতে পারে। লোকমুখে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু পেঁয়াজ বা টুথপেষ্ট কতটা ভালো ভাবে ট্যান দূর করতে পারে তা নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ডাঃ জয়িতা চৌধুরী, এমডি (ডার্মাটোলজি) বলেছেন, “টুথপেস্টে নন-আয়নিক ডিটারজেন্ট এসএলএস/পলিথিলিন গ্লাইকল, ট্রাইক্লোসান/কোপোলাইমার থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এই জিনিসগুলোর ব্যবহার বিশেষত মুখের ত্বকে, কখনোই করা উচিত নয়। “এমনকি পেঁয়াজ ও টুথপেষ্ট দুটো থেকেই ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে এবং দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে তা আরো বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, পেঁয়াজে সালফার রয়েছে, তার সঙ্গে টুথপেষ্টের উপাদানগুলি মিশ্রিত হলে তা থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে এবং এর থেকে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

Dermatologist

ডাঃ ইরাম কাজী, এমডি (ডার্মাটোলজি) বলেন, “টুথপেস্টে এমন উপাদান থাকতে পারে যা দাঁতকে সাদা করতে পারে কিন্তু ত্বককে নয়। টুথপেষ্ট ত্বকে লাগালে তা থেকে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা, জ্বালা-পোড়া এবং ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে কারণ এর উপাদানগুলি ত্বকের পক্ষে কড়া। ত্বকের কোন সমস্যায় টুথপেষ্ট ব্যবহারের পরামর্শ আমি দেব না।“

Dermatologist

এরকমই ত্বকে গোলাপ জলের ভূমিকা নিয়ে আমরা কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিষ্ট ডাঃ সৌম্যা সচদেবার সঙ্গে কথা বলি, তিনি বলেন, “গোলাপ জলে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা ত্বককে কোমলতা দেয় ও ত্বকে লাল হয়ে যাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাই, অ্যাকনের চিকিৎসায় এর ব্যবহারে উপকার হতে পারে, কিন্তু, সব ধরণের মুখের ত্বকে গোলাপ জলের প্রভাব ভালো হয় না, কারণ এর থেকে ডার্মাটাইটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Swati Watwani

এছাড়াও, পার্সিয়ানলিলির স্কিন/হেয়ার/অ্যাস্থেটিক্স/আয়ুর্বেদা ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিষ্ট এবং মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ স্বাতী ওয়াতওয়ানি ত্বকে বেকিং সোডা লাগাতে নিষেধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন বেকিং সোডায় অনেক বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় বা অ্যালকালিন পিএইচ রয়েছে, ফলে এতে ত্বকের স্বাভাবিক পরতে ক্ষতি হতে পারে, এতে ত্বকে এনজাইমের কাজ ব্যাহত হতে পারে, যা থেকে বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত হয়, যেমন জ্বালা-যন্ত্রণা, ত্বকে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া, ত্বকের প্রতিবন্ধকতার কাজ ব্যাহত হতে পারে। ত্বকে অ্যাসিডিক পিএইচ রয়েছে এছাড়াও বেকিং সোডার অত্যন্ত ঘর্ষণকারী বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচুর পরিমাণে অ-নির্দিষ্ট যান্ত্রিক এক্সফোলিয়েশন ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে এবং তা থেকে ফুসকুড়ি হয় এবং হাইপারপিগমেন্টেশন বাড়িয়ে ত্বককে আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

Dermatologist

ডাঃ নেহা খুরানা, এমডি (ডার্মাটোলজি) সহমত জানিয়ে বলেছেন, “ত্বকের চিকিৎসায় নিজে করো গোত্রের কোন পদ্ধতির আমি পরামর্শ দেব না।  প্রত্যেককে বুঝতে হবে যে আমাদের ত্বকের পিএইচ অ্যাসিডিক প্রান্তে রয়েছে, এইভাবে একটি মৌলিক পিএইচ যুক্ত কিছু ব্যবহার করা ত্বকের পিএইচ ভারসাম্যকে পরিবর্তন করতে পারে যা ত্বকের আর্দ্রতার বাধাকে প্রভাবিত করে, ফলে ত্বকে জ্বালা, শুষ্কতা এবং এক্সফলিয়েশন হতে পারে। তাছাড়া, টুথপেস্ট থেকে অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসও হতে পারে।“

Dermatologist

সব শেষে, ডাঃ জ্যোতি আগারকর, এমডি (ডার্মাটোলজি) পুরো বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, “ভগবান আমাদের খুব সুন্দর একটা দেহ ও ত্বক দিয়েছেন এবং এর রঙ এর পরিবর্তন না করে আমাদের তা নিয়েই আনন্দে থাকা উচিত। আমি সবসময়ই আমার রোগীদের সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও বেশ কিছুটা পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর থেকেই যে স্বাভাবিক চকচকে ভাবে ত্বকে আসে তা কোন কৃত্রিম ফর্সা করার পণ্য করতে করতে পারে না। এছাড়াও, যখন আপনি ত্বকের জন্য কোন পণ্য বেছে নেবেন তখন অবশ্যই আপনার ত্বক কোন প্রকৃতির তা দেখে নেবেন। “ত্বক ফর্সা করার অনেকরকম মিথ রয়েছে। থিপ মিডিয়া এর আগে এইসব দাবীর ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে চিনি আর লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় এবং টমেটো ও বেকিং সোডার মিশ্রণ লাগালে ত্বক ফর্সা হয়, ইত্যাদি। ডার্মাটোলিজিষ্টের সুপারিশ করা পণ্যগুলি ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়াও, যেকোনো নতুন স্কিনকেয়ার ট্রিটমেন্ট করার আগে সবসময় একজন স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত পেশাদার বা ডার্মাটোলজিষ্টের সাথে পরামর্শ করুন, বিশেষ করে যদি কারোর ত্বক সংবেদনশীল হয় বা কোন সমস্যা থাকে।

একটি মাটির পাত্র এবং মোমবাতি কী ঘর গরম করতে পারে?

সারমর্ম

একটি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দাবি করেছে যে একটি মাটির ফুলের পাত্র এবং একটি মোমবাতি ঘর গরম করতে পারে। আমরা সত্য-পরীক্ষা করেছি এবং দাবিটি বেশিরভাগই মিথ্যা বলে পেয়েছি।

rating

দাবি

শীতকালে ঘর গরম করার উপায় নিয়ে অনেক পোস্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে । তেমনি একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে একটি মাটির ফুলের পাত্র এবং একটি মোমবাতি ঘরকে গরম করবে। পোস্টটি বলে যে এটি ঘরটিকে উষ্ণ করে তুলতে পারে যদি অন্য কোনও উৎস না থাকে।

সত্যানুন্ধান

এই দাবী কী সঠিক?

ঠিক তা নয়। একটি মাটির ফুলদানি ও একটি মোমবাতি কিছুটা তাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি একটি ঘর গরম করতে, বিশেষত ঠান্ডার সময় এই তাপ যথেষ্ট নাও হয়ে পারে।

এটি একটি ডিআইওয়াই বা নিজে করো প্রক্রিয়া যাকে বলা হয়, ‘ফ্লাওয়ার পট হিটার’ বা ‘ক্যান্ডেল হিটার’। এতে একটি উল্টে যাওয়া মাটির ফুলদানির ভেতরে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি বসানো হয়, পাত্রটি হিট ডিফিউসার হিসেবে কাজ করে।

এই মূল বিষয়টি হল যে মোমবাতিটি ফুলের পাত্রের ভেতরে বাতাসকে গরম করে এবং পাত্রটি ঘরে সেই তাপ বিকিরণ করে।

এই পদ্ধতিতে একটি ছোট নির্দিষ্ট জায়গার জন্য তাপ হয়ত তৈরী হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে গরম করার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য বা কার্যকরী উপায় নয় এবং পুরো ঘর যথেষ্ট পরিমাণে গরম করতে এটা উপযোগী নয়।

একটি মাত্র মোমবাতি এবং ফুলদানি পুরো ঘরের তাপমাত্রা, বিশেষ করে বড় জায়গায় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট তাপ তৈরী করতে পারে না। তবে মাটির পাত্র কিছু তাপ শোষণ এবং বিকিরণ করতে পারে, কিন্তু তা খুব অল্প মাত্রায় এবং এটি কার্যকরী উপায় নয়। এছাড়াও, এটি থেকে পাত্রের আশেপাশে গরম হয়ে উঠতে পারে, যেরকম ফায়ারপ্লেসের ধারে বসে থাকলে মনে হয় কিন্তু এথেকে পুরো ঘর সমানভাবে গরম হতে পারে না।

Dr Rohan Pandey Psychiatrist

আমরা এই দাবি সম্পর্কে এমকেসিজি, ওড়িশার ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রোহন পান্ডে (এমবিবিএস, এমডি) কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, “কুড়ে ঘর গরম করার জন্য এই পাত্রের পদ্ধতি চীনে প্রাচীন কালে ব্যবহৃত হত। যদিও এমিশন একটি ফিল্টার ছাড়া দেখা যায় না, সেখান থেকে এর কাছাকাছি কিছুটা তাপ দিতে পারে। তবে, জলবায়ুর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং গৃহনির্মাণ পরিকাঠামোর পরিবর্তনের জন্য, প্রাচীন ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক হিটার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।“

ক্যান্ডেল হিটার থেকে কী কোন নিরাপত্তা জনিত উদ্বেগ রয়েছে?

কিছুটা থাকতে পারে। মাটির ফুলদানির মধ্যে মোমবাতি জ্বালালে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। প্রথমত, মোমবাতির জ্বলতে থাকা শিখা থেকে আগুন ধরে পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকতে পারে। যদি কেউ নজর না করেন বা পড়ে যায় তবে মোমবাতি থেকে আগুন লেগে পুড়ে গিয়ে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বা এমনকি বাড়িতেও আগুন লেগে যেতে পারে। এছাড়াও, মোমবাতির জ্বলন্ত শিখার জন্য মাটির পাত্রটি খুব গরম হয়ে ওঠে, এতটাই এর তাপমাত্রা বেড়ে যায় যদি এটিকে স্পর্শ করা হয় তবে দেহাংশ পুড়ে যেতে পারে – বিশেষ করে অজ্ঞতার জন্য ছোট ছেলে-মেয়ে ও পোষ্য প্রানীদের ক্ষতি হতে পারে।

আরও একটি শারীরিক সমস্যা হতে পারে তা হল কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া। একটি বদ্ধ ঘরে মোম জ্বালানো থাকলে তা থেকে বর্ণহীন ও গন্ধহীন কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরী হয়, এটি একটি বিষাক্ত গ্যাস, এর থেকে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এর কারণে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি-বমি ভাব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বাতাসের গুণমান অন্য আর একটি বিষয়, মোমবাতি যখন জ্বলে তখন ঝুলকালি এবং অন্যান্য দূষক তৈরি করে। এই দূষকগুলি, বিশেষত যেখানে বায়ু চলাচল ঠিক নেই, বা কারুর হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের ফুসফুসে সমস্যা তৈরী করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় তা আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে।

রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা আর এক উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যেসমস্ত মোমবাতি প্যারাফিন ওয়াক্স দিয়ে তৈরী। জ্বলতে থাকার সময় প্যারাফিন ওয়াক্স থেকে টলুইন বা বেনজিনের মত রাসায়নিক বের হয় যা থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ, ক্যানসার বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, তাপের জন্য মোমবাতি জ্বালানো থেকে বাতাস শুষ্ক হয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে। দুর্বল মানুষজনদের জন্য, যেমন বৃদ্ধ বা শিশুদের জন্য এটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।

ডালিম কী জয়েন্ট বা হাড়ের সন্ধির ব্যথা কমাতে পারে?

সারমর্ম

একটি ফেসবুক পোষ্টে দাবী করা হয়েছে যে ডালিম খেলে হাড়ের সন্ধির ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অর্ধেকটা ঠিক।

Fact Check Rating

দাবি

ডালিমের গুন নিয়ে অনেক ধরনের গুজব ছড়িয়ে আছে নানা ওয়েবসাইট এ । টার মধ্যেই একটি গুজব হল ডালিম খেলে পা বা জয়েন্টের ব্যথা কমে। তেমন একটি পোস্ট এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে ।

সত্যানুন্ধান

হাড়ের সন্ধি বা জয়েন্ট দু জায়গাতেই কী কী কারণে ব্যথা হয়?

পা বা জয়েন্টের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন গুরুতর কোন শারীরিক রোগ অবস্থা যেমন এডিমা বা শোথ, লিম্ফেডেমা, গভীর শিরা থ্রম্বোসিস, বা সিস্টেমিক রোগ যা হার্ট, কিডনি বা লিভারকে প্রভাবিত করে। একইভাবে, হাঁটুর ব্যথা একাধিক কারণের জন্য দায়ী, আঘাত লাগা থেকে শুরু করে, যেমন লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া বা তরুণাস্থির ক্ষতি, আর্থারাইটিস বা বাত, গেঁটেবাত বা সংক্রমণের মতো আরও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির জন্য হতে পারে।

ডালিম কী হাড়ের সন্ধির ব্যথা কমাতে পারে?

কিছুটা পারে। ২০২০ সালের একটি গবেষণায় ডালিমের বিভিন্ন রূপ (নির্যাস, রস ইত্যাদি) এবং ডালিমের বিভিন্ন অংশ যেমন খোসা, বীজ এবং অ্যার্লাজিক অ্যাসিড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষার ফলে দেখা যায় ডালিম ব্যথা উপশম করতে পারে। গবেষকরা কম্পাউন্ড বা যৌগ বের করতে মিথানল ও ইথানল নামক সল্ভেন্ট বা দ্রাবক ব্যবহার করেছিলেন। ডোজ ১০ থেকে ৩০০০মিলিগ্রাম/কেজি পর্যন্ত, ১০০ মিলিগ্রাম/কেজি সবচেয়ে কার্যকর। ডালিমের নির্যাস প্রায়শই ব্যথা কমানোর সাধারণ ওষুধের কাজ করার ক্ষমতার সঙ্গে মিলে যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ডালিমের খোসা, প্রায়শই যা বর্জ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তা সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যথা উপশমের কাজ করে। বিভিন্ন ধরণের খোসার বিভিন্ন রকমের প্রভাব নজরে আসে। মোটের ওপর ডালিমের যৌগগুলির মিশ্রণ ব্যথা উপশমের প্রভাব তৈরী করে। কিন্তু পা ব্যথা কমাতে সরাসরি ডালিমের ব্যবহারের উপকারের বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

২০১৯ এর গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে যে ডালিম রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) ইনফ্ল্যামেশন কমাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কাজ করে। তাই, এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) এর মতো ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহজনিত রোগগুলির উপশমের জন্য একটি সম্ভাব্য প্রতিকার হিসাবে কাজ করতে পারে যার লক্ষণগুলির একটি অংশ হল হাড়ের সন্ধি বা জয়েন্ট/পায়ে ব্যথা।

ডায়েট কী জয়েন্টে ব্যথা কমাতে পারে?

আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, আর্থ্রাইটিস সারানোর জন্য কোন ম্যাজিক ডায়েট না থাকলেও, মরিঙ্গার মতো অসংখ্য খাবার ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং জয়েন্ট/পায়ের ব্যথা এবং এর থেকে হওয়া উপসর্গ থেকে যাতে আরাম বেশি করে পাওয়া যায় সেই সাহায্য করতে পারে।

Orthopeadic

অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ সারাংশ গুপ্তা বলেছেন, “বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ইনফ্লামেশন কমানোর ওপর জোর দেয়। প্রকাশিত গবেষণাগুলি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে ডালিম ফলে প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড রয়েছে, যেমন পলিফেনল, অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, পুনিনিক অ্যাসিড এবং আরও অনেক কিছু। এই কম্পাউন্ডগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দুধরণের বৈশিষ্ট্যই রয়েছে, যা রোগের এবং ইনফ্ল্যামেশন চিহ্নিতকারীর প্রভাব কম করতে সাহায্য করে। গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে যে ডালিম ফলের নির্যাস (পিএফই) মানুষের তরুণাস্থি বা কার্টিলেজকে ঠিক রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে এবং মানুষের কার্টিলেজের কোষগুলিতে কোনরকম বিষক্রিয়ার প্রভাব ফেলে না।

dietitian

নিউট্রিশানিষ্ট প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, “জয়েন্টের ব্যথা একরকম ইনফ্ল্যামেটারি বা প্রদাহজনিত অবস্থা, এবং আর্থ্রাইটিস উপশমে ডালিমের কিছু উপকারিতা থাকলেও, এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে আর্থ্রাইটিস হল এমন একটি অসুখ যার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। সঠিক পরিমাণ ঠিক করার জন্য বয়স, লিঙ্গ, স্থূলতা এবং জয়েন্টে আগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আঘাতের  মতো ঝুঁকির কারণগুলিকে মাথায় রাখা দরকার। জয়েন্টে ব্যথা কমানো এবং এই সমস্যা সমাধানের সময় বিশেষত আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে, এই সমস্ত কারণগুলিকে মাথায় রাখা জরুরি।“

গ্রীণ টি কী ডিপ্রেশন প্রতিহত করতে পারে?

সারমর্ম

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন আটকানো যায়। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবী অনেকাংশে ভুল।

Rating

দাবি

সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে গ্রীণ টি খাওয়ার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একটি পয়েন্টে, দাবি করা হয়েছে যে গ্রীণ টি খেলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এরকম একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।

সত্যানুন্ধান

গ্রীণ টি বা সবুজ চা কী?

গ্রীণ টি সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় ও এটি ঠান্ডা বা গরম দুভাবেই খাওয়া হয়। এটি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এই গাছটি থেকে কালো চা, ওলং চা এবং সাদা চা-ও পাওয়া যায়। তবে, অন্যান্য চায়ের সঙ্গে গ্রীণ টি র পার্থক্য হল এটি যখন তৈরী করা হয় এতে সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগ হয়। গ্রীণ টি সবচেয়ে কম পরিমাণ অক্সিডেশন পদ্ধতির প্রয়োগে তৈরী হয়। এর ফলে এই চায়ে স্বাভাবিক অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গ্রীণ টি খেলে কী কোন স্বাস্থ্যকরী উপকার পাওয়া যায়?

হয়ত পাওয়া যায়। গ্রীণ টি থেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপকার পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট তৈরী যা হার্ট ভালো রাখতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও গ্রীণ টি ব্রেণের কাজ ভালো করতে সাহায্য করে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, দাঁত ভালো রাখে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু এগুলি কম পরিমাণে খেলে তবেই সম্ভব কারণ এতে রয়েছে ক্যাফিনের কিছু উপাদান এবং ব্যক্তিবিশেষে তা পরিবর্তিত হতে পারে।

ব্রেণের স্বাস্থ্যের ওপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে প্রমাণ কী বলে?

বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, বিশেষ করে ক্যাটেচিন এবং ক্যাফিনের উপাদানের জন্য গ্রিন টি ব্রেনের স্বাস্থ্যের ভালো রাখার বিষয়টির ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা কয়েকটি গবেষণা পত্র সংগ্রহ করেছি যেখানে ব্রেনের স্বাস্থ্যের উপর গ্রীণ টির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানঃ গ্রীণ টি-তে রয়েছে অনেক বেশী মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্যাটেচিন যা এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালাট (ইজিসিজি) নামে পরিচিত। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ব্রেনের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে, যা বার্ধক্য এবং অ্যালজাইমার ও পারকিনসনের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের সাথে যুক্ত।

নিউরোপ্রোটেকশনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিনে নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব থাকতে পারে, এর ফলে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং কগনিটিভ বা জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজকর্ম উন্নত করে। যদিও, মানুষের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।

কগনিটিভ ফাংশন উন্নত করাঃ নিয়মিত গ্রীণ টি খাওয়া কগনিটিভ ফাংশনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এই কাজকর্ম উন্নত হওয়া এবং তা কমে আসার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, ফলাফলগুলি নিয়ে দন্দ্ব রয়েছে, এবং এর একটি কার্যকারণ সম্পর্ক তৈরীর জন্য আরও জোরালো ক্লিনিকাল গবেষণার প্রয়োজন।

মুড বুষ্টিং বা মন ভালো করা ও মেন্টাল অ্যালার্টনেস বা মানসিকভাবে সচেতন থাকাঃ গ্রীণ টির মধ্যে থাকা ক্যাফিনের উপাদান মন ভালো করতে পারে সেইসঙ্গে মানসিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, এর থেকে কগনিটিভ পারফরমেন্স বাড়ে ও ডিপ্রেসশনের ঝুঁকি কমে গিয়ে তা পরোক্ষ ভাবে ব্রেন ভালো রাখে।

নিউরোজেনেসিসে সম্ভাব্য ভূমিকা পালনঃ গ্রীণ টি-র ক্যাটেচিন নিউরোজেনেসিসকে বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রেনের নতুন নিউরোন তৈরী হয়। এর থেকে কগনিটিভ ফাংশন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

মোটের ওপর কয়েকটি প্রমাণ আছে যেখানে দেখা গেছে গ্রীণ টি ব্রেনের ওপর কিছু প্রভাব ফেলছে। তবে,আমাদের ব্রেনে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব এবং উপকারিতা পুরোপুরিভাবে বোঝার জন্য আরও অনেক মানুষের মধ্যে এলোমেলোভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা বা র‍্যানডামাইজড কনট্রোল্ড ট্রায়াল সহ আর উঁচু-মানের গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও, জেনেটিক্স, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েট এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস বা লাইফস্টাইলের মতো কারণের উপর ভিত্তি করে গ্রীণ টি খাওয়ার প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে।

গ্রীণ টি খেলে কী ডিপেশন প্রতিহত করা যায়?

ঠিক তা নয়। গ্রীণ টি যে ডিপ্রেশন আটকাতে পারে তার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই। অল্প পরিমাণে যেসব প্রমাণ রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে গ্রীণ টি ডিপ্রেসিভ মুড বা মনখারাপের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। ২০২৩ এ প্রকাশিত অন্য একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে অনেক দিন ধরে গ্রীণ টি খেলে মহিলাদের মেনোপজের পরে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমাতে পারে।

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীণ টি-তে এল-থেনাইন এর মতো যৌগ রয়েছে, এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে বলে পরিচিত এবং ক্যাটেচিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই যৌগগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি অর্থাৎ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো একটি।

তবে, এটা মনে রাখা দরকার যে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে ঠিকই যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সঙ্গে গ্রীণ টি খাওয়ার যোগ রয়েছে কিন্তু এই প্রমাণগুলি চূড়ান্ত নয়। গ্রীণ টি এবং ডিপ্রেসশনের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা এখনো চলছে এবং এর সাথে জড়িত সমস্তরকম সুবিধা এবং প্রক্রিয়াগুলি পুরোপুরি বোঝার জন্য আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন। যাই হোক না কেন, একটি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসাবে গ্রিন টি খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এটিকে ডিপ্রেশনের জন্য একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা হিসাবে দেখা উচিত নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে পেশাদার সাহায্য নেওয়া অত্যাবশ্যক, যিনি উপযুক্ত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবেন।

কনসালটেন্ট সাইকোলজিষ্ট ডাঃ রাহুল বনসল থিপ-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন, “চিকিৎসায় যে কোনো ধরনের বিলম্ব এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাবে”।

শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করলে ডিপ্রেশন প্রতিরোধ করা যায় এই ধারণাটি একটি জটিল অবস্থার অতি সরলীকরণ, এবং ডিপ্রেসনের চিকিৎসার জন্য একটি সামগ্রিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।

Dr Binda Singh

সাইকিয়াটিষ্ট ডাঃ বিন্দা সিং জানিয়েছেন, “ডিপ্রেশন হচ্ছে একটি অসুখ এবং এর সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন পরিস্থিতিগত বা সিচুয়েশনাল, ট্রমা, শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি। ডিপ্রেশনের মোকাবিলায় প্রয়োজন হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, পরামর্শ, ইতিবাচক চিন্তা, কথা বলা ইত্যাদি।

Dr Sameer Kalani

দুর্ভাগ্যবশত, ডিপ্রেসশনের জন্য খাদ্যতালিকাগত প্রতিকারের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।“ অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ সমীর কালানি থিপ মিডিয়া-কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ডিপেশনের মূল কারণকে সরিয়ে ফেলতে পারে না।