সারমর্ম
অনেক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে দাবী করা হয়েছে কলার মোচা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সারাতে পারে। আমরা এই দাবীর সত্যতা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা জেনেছি যে এই দাবীর অর্ধেকটা ঠিক।
দাবি
রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সারানো নিয়ে অনেক ঘরোয়া পধ্যতি রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল কলার ফুল বা মোচা অ্যানিমিয়া সারাতে পারে । পোস্টটি এইখানে দেখতে পাওয়া যাবে ।
সত্যানুন্ধান
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কী কলার মোচা উপকারী?
হ্যাঁ। কলার মোচা কে অনেক সময় কলার হৃদয় বলা হয়। এটার ফ্লেবার হয়ত কড়কড়ে, বাদামের মত বা স্টার্চের মত। কিন্তু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে খাওয়ার যোগ্য এই ফুলগুলি বিশেষভাবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন এ, ই ও সি রয়েছে, সেই সঙ্গে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলির জন্য এটি দিয়ে ব্রংকাইটিস, আলসার এবং কনস্টিপেসন সারানো যেতে পারে। এছাড়াও, ব্লাড সুগারের মাত্রা কমানো ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও এটি সাহায্য করতে পারে। এটি পিরিয়ড বা মাসিকের ফ্লো কমানো, মাসল ক্র্যাম্প, হাড় মজবুত রাখা এবং এমনকি যে মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য দুধের পরিমাণ বাড়াতেও এটি কাজ করে। এটিও উল্লেখ করা উচিত যে মোচা সাশ্রয়ী একটি কৃষি উপজাত বা বাই প্রোডাক্ট। এবং বিভিন্ন ধরণের নতুন রান্নার জন্য উপযোগী ও সেই সঙ্গে ডিহাইড্রেটেড পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধে কী কলার মোচা সাহায্য করতে পারে?
হ্যাঁ। এটি একটি কার্যকরী খাবার যা ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিগত ভাবে উপকার করে। কলার মোচায় ম্যাক্রো ও মাইক্রো দুটি উপাদানই খুব বেশি মাত্রায় থাকে। খাওয়ার উপযোগী এই অংশটি আয়রনের খুব ভালো উৎস। এছাড়া, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে কলার মোচার তৈরী রান্না থেকে কোন ব্যক্তি তার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় আয়রনের পরিমাণ পুষিয়ে নিতে পারেন। এভাবেই কলার মোচা থেকে আয়রনের সঞ্চয় বাড়তে পারে। অ্যানিমিয়ার উপসর্গ কমানোর জন্য এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানত ক্লান্তি, অবসাদ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া প্রভৃতি। এভাবেই, নিয়মিত ও সুষম মাত্রায় কলার মোচা খেলে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ে। যার ফলস্বরুপ যারা আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে।
কলার মোচা কী অ্যানিমিয়া পুরোপুরি সারাতে পারে?
ঠিক তা নয়। অ্যানিমিয়া রক্তের একটি অবস্থা। আয়রনের ঘাটতি, ক্ষতিকর বা পেরিনিয়াস, অ্যাপ্লাস্টিক এবং হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া হল এর বিভিন্ন ধরন। এছাড়া, এগুলির মধ্যে কিছু কম ক্ষতিকর আবার কিছু খুব জটিল, এমনকি তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই বিশেষ ধরণের অ্যানিমিয়া বিভিন্ন ঝুঁকির কারণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই, অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে উপসর্গগুলি কমানো, সেই সঙ্গে অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি সমাধানের পাশাপাশি অ্যানিমিয়ার জটিলতাগুলি কমানো ও স্বাস্থ্যের উন্নতিও জড়িত। তাছাড়া, মাইল্ড বা অল্প মাত্রায় অ্যানিমিয়া ডায়েটের পরিবর্তন করে বা সাপ্লিমেন্টের সাহায্যে কমানো যেতে পারে। কিন্তু বেশি মাত্রায় অ্যানিমিয়া সারাতে ওষুধ বা ব্লাড ট্রান্সফিউশান বা রক্ত দিতে হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এর কারণ খুঁজে বের করে এর চিকিৎসা করতে হতে পারে।
তাই, কলার মোচা অল্প অ্যানিমিয়ার উপসর্গ যা আয়রনের ঘাটতির জন্য হয় তা সারাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, এমন কোন প্রমাণ নেই যে কলার মোচা এককভাবে গুরুতর বা প্রাণঘাতী অ্যানিমিয়ার সমস্যার সমাধান করতে পারে।
অ্যানিমিয়া সারাতে শুধুমাত্র পুষ্টির ওপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ কেন?
অ্যানিমিয়া হয় প্রধানত তিনটি অবস্থার কারণে। এর মধ্যে রয়েছে লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসি তৈরী হতে না পারা, খুব বেশি মাত্রায় আরবিসি-র ক্ষতি হওয়া এবং রক্তক্ষরণ। বিশ্বজুড়ে পুষ্টির ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়ার সমস্যা ক্রমাগত হয়ে চলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে এই সমস্যার জন্য অন্তর্নিহিত শারীরিক সমস্যা ও হয়ত বংশগত সমস্যাও। অ্যানিমিয়া সারানো শুধুমাত্র পুষ্টির ওপর ভিত্তি করে করা যায় না, চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার সঙ্গে ডায়েটের পরিবর্তন করাও জরুরি। এছাড়াও, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পুষ্টিগত সাপ্লিমেন্টগুলি অল্প উপসর্গে কাজ করতে পারে। তবে, রোগীর অবস্থায় যদি এই সাপ্লিমেন্ট গুলিতে কোন ফল না হয়, তবে একজন চিকিৎসকই পারবেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।
আমরা জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ কাশ্যপ দক্ষিণীকে জিজ্ঞাসা করেছি যে অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় শুধুমাত্র পুষ্টির উপর নির্ভর করা কেন ঝুঁকিপূর্ণ এবং অ্যানিমিয়া সারানোর সঠিক উপায় কী। ডাঃ কাশ্যপ ব্যাখ্যা করে জানান, ”সামগ্রিকভাবে অ্যানিমিয়া সারাতে হলে এর কারণ জানা খুব জরুরি। অ্যানিমিয়া সাধারণত যে যে কারণে হয় তা হল – রক্তক্ষরণ, পুষ্টির অভাব, ভালো মানের লোহিত রক্তকণিকা তৈরি না হওয়া, ত্রুটিপূর্ণ লোহিত রক্তকণিকার ক্ষয়, কঠিন কিছু অসুখ, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা ক্রনিক ইনফেকশন, রেনাল বা অটোইমিউন রোগ এবং থ্যালাসেমিয়া। তাই অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রধান বিষয় হল এটা জানা কী কারণে অ্যানিমিয়া হয়েছে। পুষ্টির অভাবে হওয়া অ্যানিমিয়া সারাতে আয়রন, ভিটামিন বি১২ বা ফলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। যেসব রোগীর খুব বেশি পরিমাণে আয়রনের অভাব থাকে তাদেরকে কমে যাওয়া হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক করতে রক্ত দেওয়া বা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয়।“
খাবার হিসেবে কলা গাছের ফুল বা মোচার পুষ্টিগুণ নিয়ে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে কলার উপকারিতা নিয়ে অনেক অথ্য পাওয়া গেলেও কলার ফুল বা মোচার উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য খুবই অল্প। ফলে, এর বিস্তারিত সম্ভাব্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাই এই দাবীকে অর্ধেক ঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়।